Thursday, December 31, 2009

বাংলার গ্রাম আমার প্রাণ


মোমেনশাহীর ত্রিশালে, উপজেলার মুক্ষপুরে, মাছের খামারে,
বিষ ঢেলে মাছ মেরে ফেলে
দুর্বৃত্তের দলে।
ছাতারপাইয়ার মধ্যবাড়ি আর মজুমদার বাড়ি
কলহের আগুনে পুড়ে যেন এক রাঁঢ়ের বাড়ি।
নাটোরের লালপুর রাধাকান্তপুর
হিংসার দ্বন্ধে কতদিন এক ক্লান্তপুর!
গৌরনদী পৌর শহরের দক্ষিণ পালরদী গ্রাম,
যৌতুকের বলি
'মনি আর মনিরের' প্রেম।
সবাইকে কাঁদিয়ে অভিমানী মনি আত্মহত্যার কোলে
নিষ্ঠুর চরগাধাতলী।


মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্মুখী আক্রমণে পরাভূত পাক বাহিনী,
এদিকে মুক্ত স্বাধীন জনপদে পত্ পত্ করে উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা।
অপ্রতিরোধ্য বাঙ্গালীদের অগ্রযাত্রায় মুক্ত
মৌলবীবাজার, বরিশাল, ঝালকাঠি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, পিরোজপুর।
রাজাকারের আস্তাকূড়।
জনপদবাসী বিজয় উল্লাসে মেতে উঠে।

একাত্তরে বীরদর্পে লড়ে জাতির অহংকার মুক্তিসেনা
আমাদের বিজয় নিশ্চিতের সূত্রপাত করে,
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এক সময়ের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় জাতির মুক্তিযুদ্ধে।
বীর যোদ্ধাদের অদম্য সাহসিকতা আর দেশপ্রেমে পরিচালিত লড়াইয়ে দিশেহারা
তদানীন্তন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী।
সম্মুখ সমরে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজয়ের ভয়ে ভীত
হানাদারের দোসরেরা।
মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও বীরত্ব গাঁথা কাহিনী।
প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য প্রাণপণে লড়ে অকুতোভয়ে।
ইয়াহিয়ার দানবমূর্তি সংবলিত পোস্টার 'এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে'
চিত্রশিল্পের ইতিহাসে পটুয়া কামরুল হাসান,
স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশা বানান।
'দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে' কামরুলের কার্টুন চিত্রের থাপ্পড়ে
জেগে উঠে মরা গ্রাম আবার নড়েচড়ে।


শংখ ও ডলু নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হতে চলেছে সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর কালিয়াইশ, ধর্মপুরের আলমগীর চৌধুরী গ্রাম।
কয়েক শতাধিক পরিবার গৃহহীন
নলুয়া, খাগরিয়া, আমিলাইশ, চরতি, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, পুরানগড় ও বাজালিয়া।
চন্দনাইশের চাগাচর, বৈলতলী ও দোহাজারী ইউনিয়নের বহু পরিবার গৃহহীন ।
সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নের পূর্ব কাটগড় গ্রাম নদীগর্ভে অনেকটা বিলীন।
ভাঙ্গনের কবলে ঝুকিপূর্ণ কয়েক শতাধিক পরিবার, হাজার হাজার একর ফসলি জমি, বহু মসজিদ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
উত্তর কালিয়াইশ আলমগীর চৌধুরী গ্রাম সাতকানিয়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।
ডলু নদীর ভাঙ্গনে সামিয়ার পাড়া, বোয়ালিয়াপাড়া, সতিপাড়া, ছমদরপাড়া, রোজমরপাড়া, মাদার্শা ও রামপুরের তীরবর্তী জনপদগুলো প্রতিবছর নদীগর্ভে বিলীন ।
জলাবদ্ধতায় কালিগঞ্জ, শ্যামনগর, আশাশুনি ও দেবহাটা।
অপরদিকে ইছামতি, কালিন্দী, কাঁকশিয়ালী, খোলপেটুয়া নদীর সংস্কার খালগুলোর দু'পাশের মাটি ভেঙ্গে ভরাট । বর্ষা মওসুমে কৃষকদের ফসল তলিয়ে যায়। কাজ নাই হাজার হাজার মানুষ বেকার ।
তারা না পারে কইতে, না পারে সইতে, না পারছে চাইতে।

নদীর পারে দাঁড়ালেই বাতাসে যেন এখন শুনতে পাওয়া যায় ক্ষীণকায়
তিস্তার দীর্ঘশ্বাস আর গুমরে ওঠা কান্না।
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পানিশূন্য তিস্তা পরিণত ধু-ধু বালুচরে।
ক্ষীণধারায় তিস্তার মূল অববাহিকা প্রবাহিত,
শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশ অংশ পানি সঙ্কটে পতিত।
তিস্তার পানি এখন হিস্যার বিষয়।
প্রকৃতির কোলে সৃষ্টি এককালের স্রোতস্বিনী পাহাড়ী নদী তিস্তা,
মানুষের হাতে মৃত্যুই যেন এখন তার অমোঘ নিয়তি।
উজানে ভারতের গজলডোবায় প্রবেশমুখে এখন বেঁধে গেছে।
ব্যারাজগুলো এ নদীর উচ্ছল দুর্বার গতিকে রোধ করে দেয়।
বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ক্যানালের মাধ্যমে নদীর স্রোত ঘুরিয়ে
তার বুক থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে এ নদীর জীবন,
তিস্তা তার নাব্যতা হরিয়ে শীর্ণ, কঙ্কালসার।
নদী যখন উচ্ছল স্রোতস্বিনী ছিল,
দু'পারের হাজার হাজার পরিবার যারা এই নদীকে ঘিরে গড়ে তুলেছিল বসতি ও জীবন,
তিস্তার করুণ পরিণতিতে পুরোপুরি বেকার নদীপারের মানুষজন,
নদীর ভরাটে একটু বর্ষায় দু'কূল ছাপিয়ে ফুঁসে ওঠে, প্রতিশোধ নেয় সে মানুষের ওপর।
ঘরবাড়ি, ফসল সব কিছু উজাড় করে ফেলে।
বারবার ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে পড়ে লাখো মানুষ।
নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মৎসজীবীরা বাপ-দাদার পুরনো পেশা ছেড়ে
এখন দিনমজুর কিংবা গ্রাম ছেড়ে শহরে পালায়, ছিন্নমূল।
খেয়াঘাট বন্ধ হয়, চরাঞ্চলের যোগাযোগ একেবারেই অচল অন্ধ।
তিস্তার ভাঙ্গনে জনেজনে জনপদে বিষন্ন দুপুর।
হারিয়ে গেছে রঙিন পালের নৌকা আর সেই চিরচেনা সুর দূর বহুদুর
'নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা'।

No comments: